বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
বুধবার আমফান চলে গিয়েছে। তার পর তিনটে দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও দক্ষিণবাংলার বহু জায়গায় বিদ্যুৎ নেই, এমনকী, পানীয় জলের সমস্যাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই মানুষ ক্ষোভে পথে নেমেছেন। এমনকী, শনিবারও বিভিন্ন জায়গায় পথ–অবরোধ এবং বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে। যদিও কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম শুক্রবার জানিয়েছিলেন, কলকাতাকে স্বাভাবিক করতে সাতদিন সময় লাগবে। তাঁর এই মন্তব্য যে পুরবাসীরা স্বাভাবিক মনে নেননি, এদিন তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায়। ফিরহাদও তাই নিজের বক্তব্য থেকে সরে এসে জানান, কলকাতাকে দ্রুত স্বাভাবিক করে তোলা হবে।
কিন্তু শনিবারও কলকাতা–সহ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ যেমন আসেনি, তেমনই পানীয় জলের সঙ্কটও মেটেনি। এর মধ্যে অনেক রাস্তায় দেখা গিয়েছে ভেঙে পড়া গাছের স্তূপ। পাশাপাশি বেহালার মতো অনেক অঞ্চলে জল জমে বিশ্রী অবস্থা তৈরি করেছে। তাই শনিবার বেহালা, যাদবপুর, নেতাজিনগর, হরিদেবপুর, ঠাকুরপুকুর, ইএম বাইপাসের কাছে ভিআইপি মার্কেট ক্রসিং, বউবাজার, বেলঘরিয়ার পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ভ্যাবলা, জগদ্দল, রহড়ার দোপেরিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা, সোনারপুর, হাওড়া, হুগলির চুঁচুড়া, শেওড়াফুলি, ডানকুনি, শ্রীরামপুর, ভদ্রেশ্বরের চাঁপদানিতেও মানুষ বিক্ষোভ দেখান। কোথাও কোথাও পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অবশেষে বাধ্য হয়েই কলকাতাকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেনাবাহিনীর সাহায্য চান। এর পরই কলকাতায় পাঁচ কলম সেনা নামে। কলকাতার সার্দান অ্যাভিনিউ, রাজারহাট, বেহালা, টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ এবং ডায়মন্ড হারবারে সেনাবাহিনী ভেঙে পড়া গাছ সরাতে শুরু করে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সেনারা কাজ করছে বলে সেনাবাহিনী সূত্রে জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেনাবাহিনীর সাহায্য চাওয়ায় খুশি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। তিনি টুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও করেন। তবে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সেনা যদি নামাতেই হত, তা হলে আরও আগে নামানো হল না কেন? কলকাতাবাসীরা তো তা হলে দুর্ভোগ থেকে আগেই রেহাই পেতেন।’
এদিকে, কলকাতার পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলে চাঞ্চল্য তৈরি করেছেন প্রাক্তন মেয়ের শোভন চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা পুরসভার বিদায়ী মেয়র তথা প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের নাম উচ্চারণ না করলেও তিনি বলেন, ‘কলকাতার অবস্থা দেখে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে মেয়রকেই। কার দায়িত্ব সড়কের, কার দায়িত্ব পরিবহণের, কে দেখবেন বিদ্যুৎ, এ সব ভাবলে চলবে না। যদি পাম্পিং স্টেশনগুলি চালু থাকত, যদি গেটগুলো খুলে দেওয়া হত, তা হলে রাস্তাগুলিতে এ ভাবে জল জমে থাকত না। মনে হয়, পুরসভা বিষয়টির গুরুত্ব ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পারেনি।’ শুধু তাই নয়, পুরসভার কমিশনারের দায়িত্ব থেকে খলিল আহমেদকে সরিয়ে দেওয়া নিয়েও তিনি মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ‘তিনি খুব দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। এর আগে অনেক দায়িত্ব সামলেছেন। তাঁকে কেন সরিয়ে দেওয়া হল বুঝতে পারলাম না।’
তাঁর মন্তব্যে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের তরফে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে দলের অভ্যন্তরে অনেকেই প্রাক্তন মেয়রের সমালোচনা করেছেন বলে সূত্রের খবর।